জেনেনিন কীভাবে স্বপ্নকে লক্ষ্যে রূপান্তরিত করতে হয়?



’স্বপ্ন সেটা নয় , যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে
স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’’
ডঃ এ.পি.জে.আব্দুল কালাম।
মানুষ স্বপ্ন দেখে । স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। স্বপ্ন সাধারণত দুই রকমের হয়। যার একটি হলো স্বাভাবিক স্বপ্ন, যা আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি । আরেক ধরনের স্বপ্ন আছে যা হলো বড় হওয়ার স্বপ্ন, জীবনে কিছু করার স্বপ্ন । এ স্বপ্নই আমাদের জীবনকে পরিচালিত করে । যেমন – ডাক্তার, পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, নেতা ইত্যাদি হওয়ার স্বপ্ন ।
বাইবেলে সুন্দর কথা আছে – যে বিশ্বাস করে সে বেঁচে থাকে। যে বিশ্বাস করে তার স্বপ্ন পূরণ হবে এবং তার জন্য কাজ করে সে-ই তার লক্ষ্যে পৌছায়। আমরা অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখি, এই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে চেষ্টা করতে হয় । পরিশ্রম করতে হয়। উইলিয়াম ল্যাংলয়েড বলেছেন – “ যেখানে পরিশ্রম নেই সেখানে সাফল্যও নেই॥ ” সুতরাং স্বপ্নকে লক্ষ্যে রুপ দিতে কিছু জিনিস মেনে চলতে হয়। তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেসব নিয়ম –
পরিকল্পনা
‘’জীবন সেটাই যা আমাদের সাথে ঘটে যখন আমরা অন্য পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকি ‘’
যেকোন কাজ শুরুর আগে সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হয়। পরিকল্পনা করে কাজ করলে কাজের মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকে। তাই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।
dream in action


লিখে রাখা
তুমি যা নিয়ে স্বপ্ন দেখ, সেটা একটা ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করে রাখ, যা তুমি অর্জন করতে চাও এবং যে অর্জন তোমাকে এনে দিবে মানসিক প্রশান্তি। প্রতিদিন সকালে একবার ডায়েরীতে চোখ বুলিয়ে নিবে তোমার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে। কোনো ধারণা বা লক্ষ্য একটি কল্পিত বিষয় হিসেবেই রয়ে যাবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত তুমি সেটাকে কাগজে লিখে রাখছো। লক্ষ্য অর্জনে এটাই প্রাথমিক মৌলিক পদক্ষেপ।
সময়সীমা
ডায়েরীতে লিখে রাখ স্বপ্ন পূরণ করতে কত সময় লাগতে পারে এবং তা নির্ধারণ করে নাও। এটি লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। এই সময়ের মধ্যে স্বপ্নকে বাস্তবে পরিবর্তন করতে হবে ।
ত্যাগ স্বীকার 
‘’স্বপ্ন সত্যি হয় যদি আমরা কঠোর পরিশ্রম করি। আপনি জীবনে সবকিছু করতে পারবেন যদি আপনি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন।‘’
– জে.এম ব্যারি
জীবনে আমাদের লক্ষ্যে পৌছাতে হলে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে আমাদের কিছু কিছু ত্যাগ করতে হয়। লক্ষ্য যা-ই হোক না কেন আমরা যদি এই ত্যাগ করতে রাজী থাকি তাহলে সহজেই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো । সফলদের জীবনী পড়লে দেখা যাবে, লক্ষ্য পূরণ করতে কত ত্যাগ করতে হয়েছে।
নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকা
“যারা বলে অসম্ভব, অসম্ভব তাদের দুয়ারেই বেশি হানা দেয়॥” —জন সার্কল।
কোন কাজ শুরুর আগে , এটা আমাকে দিয়ে হবে না, আমি পারবো না, অনেক কঠিন কাজটা – এসব ভাবা ঠিক না। শুরুটাই যদি নেতিবাচক হয় তাহলে স্বপ্ন পূরণ করা যাবে না, কারণ শুরুতেই মাথায় ঢুকে গেছে আমি পারবো না। সুতরাং, নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সবসময় ইতিবাচক ভাবতে হবে যেকোন বিষয়। তাহলে কাজটা করতে সহজ হয়।
পরিশ্রম
পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। যেকোন কাজের জন্য পরিশ্রম করা আবশ্যক। প্রবাদ আছে- ‘’পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি।‘’ তোমার স্বপ্নকে সত্যি করতে হলে তোমাকে অবশ্যই পরিশ্রমী হতে হবে। পরিশ্রমের মাধ্যমেই সবকিছু বাস্তবায়িত করা সম্ভব।
“ মাত্র দুটি পন্থায় সফল হওয়া যায়! একটি হচ্ছে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা, ঠিক যা তুমি করতে চাও। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া॥ ”
—মারিও কুওমো।
আত্মবিশ্বাস
“একটি মানুষ যেটা কল্পনা এবং বিশ্বাস করতে পারে সেটা অর্জনও করতে পারে।“  -নেপোলিয়ন হিল
নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে তুমি যা চাও তা তুমি পাবে এবং তার জন্য কাজ করতে হবে। হাল ছাড়বে না। প্রতিজ্ঞা করতে হবে- তুমি এর শেষ পর্যন্ত যাবে। আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে আমি এটা পারবো, তবেই তুমি তোমার লক্ষ্যে যেতে পারবে।
অজুহাত 
‘’আমার সফলতার ক্ষেত্রে ধর্ম হচ্ছে আমি কখনই কোনো অজুহাত দেই না এবং নেই না। ‘’-ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল
তোমার স্বপ্ন পূরনের ক্ষেত্রে কোন জিনিস বাঁধা হয়ে আসছে সেটা বের করো। সে বাঁধাকে জয় করে সামনের দিকে যেতে হবে। সকল অজুহাতকে না বলো। অযথা অজুহাতে কারো কোন ক্ষতি হচ্ছে না, তোমার নিজেরই ক্ষতি হচ্ছে। অজুহাতকে না বলে স্বপ্ন পূরণের জন্য যা করা দরকার তা করো। দেখবে একদিন তুমি তোমার লক্ষ্যে ঠিকই পৌঁছে গেছ।
বাস্তববাদী
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলে শুধু চলবে না। তুমি স্বপ্ন দেখ, তুমি ভাবো-  আহা!আমার স্বপ্নটা যদি সত্যি হতো! এভাবে শুধু ভাবলে হবেনা। ঘুমের জগত থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাস্তবতা দেখতে হবে। স্বপ্ন দেখা সহজ, এটা সবাই দেখে। কিন্তু তোমাকে তোমার স্বপ্ন পূরণ করে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। কাজ করতে হবে।
অভ্যাস
“তুমি তোমার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারবে না কিন্তু তোমার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারবে এবং তোমার অভ্যাসই নিশ্চিত ভাবে তোমার ভবিষ্যত পরিবর্তন করবে।“
-এ পি জে আবদুল কালাম
মানুষ অভ্যাসের দাস। তুমি যা অভ্যেস করবে তা-ই হবে। যেমন- অনেকের অভ্যেস ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল নিয়ে গেম খেলা অথবা ইন্টারনেট ইউজ করা। এই অভ্যেস বাদ দিয়ে বই পড়া অভ্যেস করতে পারো। সময়ের কাজ সময়ে করা অভ্যেস করতে পারো। সকালে জলদি ঘুম থেকে অভ্যেস করতে পারো ইত্যাদি। তোমার অভ্যাস গুলোকে ভালো অভ্যাসে পরিবর্তন করো, তাহলে তুমি তোমার লক্ষ্যে অনেক সহজে যেতে পারবে।
ঝুঁকি 
ব্যবসায়ের ভাষায় একটা প্রবাদ আছে- No Risk, No Gain.  আসলেই তাই।  ঝুঁকি ছাড়া কোনকিছু অর্জন করা যায় না।  জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঝুঁকি বিদ্যমান। তেমনি তোমার স্বপ্ন পূরণের বেলাতেও ঝুঁকি থাকবে। এসব ঝুঁকিকে সঙ্গে করে স্বপ্ন পূরণের জন্য  কাজ করতে  হবে।
ধৈর্য্য
আমরা অনেকে আছি যাদের ধৈর্য্য অনেক কম। কোন কাজ শুরু করলে তা শেষ হবার আগেই হাল ছেড়ে দেই। এমনটা করা মোটেও উচিত না। অনেক সময় দেখা যায়- লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি এসেই হাল ছেড়ে দিয়েছি। সকল কিছুতে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। হেরে যাবার ভয় থাকলে চলবে না, এই ভয়টাকে জয় করে এগিয়ে যেতে হবে। নিজেকে শান্ত রাখতে হবে।
“স্বপ্ন সত্যি হওয়ার আগে তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে।“ –  এ পি জে আব্দুল কালাম
এ উক্তি থেকে কি বোঝা যায় ? আচ্ছা আমি বলছি – কোন স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে হলে তো আগে স্বপ্ন দেখতে হবে । তারপর সেই স্বপ্ন নিয়ে কাজ করতে  হবে। প্রতিটা মানুষ স্বপ্ন দেখে।  স্বপ্ন দেখতে কোন বাঁধা নেই। তবে সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য তোমাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে – আমি পারবো । স্বপ্নকে ভালোবাসতে হয় । তবেই সকল বাঁধা অতিক্রম করে লক্ষ্যে যেতে পারবে। শেষ করছি  মার্ক জুকারবার্গ এর উক্তি দিয়ে –
“ আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেইস্বপ্নে আস্থা ছিল। আর আমি কাজটা ভালোবাসতাম। ফেসবুক বিফল হলেও আমার ভালোবাসাটা থাকত। জীবনে একটা স্বপ্ন থাকতে হয়, সেই স্বপ্নকে ভালোও বাসতে হয়॥ ”
—মার্ক জুকারবার্গ।

সংগৃহীত লেখা।

Previous Post Next Post